পারিবারিক জীবনে শান্তি পেতে স্ত্রীকে সময় দিতে হবে।একবার, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার ভাই আবু দারদার পার্থিব কোনো কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা এলেন। তারপর তিনি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য খাবার প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবু দারদা সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবু দারদা সালাত আদায়ে দাঁড়াতে গেলেন। সালমান বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবু দারদা ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবু দারদা আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো, সালমানআবু দারদাকে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তাঁরা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান তাঁকে বললেন, আপনার রবের হক আপনার ওপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার ওপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালমান ঠিকই বলেছে”।- (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৮)‘এক রাতে হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনগণের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রহরী বেশে বের হয়ে গেলেন। এক বাড়ির পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি ঘর থেকে নারী কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেলেন। ঘরের ভিতর এক মহিলা কবিতা আবৃত্তি করছিল। যার অর্থ হলো, রজনী দীর্ঘ হয়েছে এবং এক পাশ কালো হয়েছে । এদিকে দীর্ঘদিন যাবত আমার প্রেমাস্পদ আমার কাছে নেই যে, তার সাথে আমি আমোদ-প্রমোদ করব। আল্লাহর শপথ! যদি এক আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে এ খাটের চার পাশ নড়ে উঠত।যখন ভোর হলো হযরত উমার রাতের কবিতা আবৃত্তিকারিণী মহিলাকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। মহিলা খলিফার দরবারে এসে উপস্থিত হলে হযরত উমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি গত রাতে এ-জাতীয় কবিতা আবৃত্তি করেছিলে? মহিলা বলল, হ্যাঁ।উমর বললেন, কেন? উত্তরে মহিলা বলল, ” দীর্ঘদিন যাবত আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে রয়েছে। অথচ এমুহূর্তে তার নৈকট্য পাওয়া আমার একান্ত কাম্য ছিল,তার বিরহেই আমি এমনটি করেছি৷” উমর এ কথা শুনে তখনই ঐ মহিলার স্বামীর নিকট ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়ে শাহী ফরমান প্রেরণ করলেন। এরপর তিনি তার কন্যা হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? (প্রজাদের স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা যদি না হত তবে আমি তোমার নিকট এরুপ প্রশ্ন করতাম না) তখন হাফসা (রা.) বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হযরত উমর (রা.) চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১২৫৯৪]তাই চার মাসের অধিক সময় স্ত্রী থেকে দূরে থাকা শরিয়ত সমর্থন করে না। তবে কেউ যদি প্রয়োজনে এরচেয়ে বেশি সময় দূরে থাকতে চায় তাহলে তার স্ত্রী থেকে অনুমতি নিতে হবে। মনে রাখবেন, যে স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি দয়ার আচরণ করবে, সে নিশ্চিত তার স্ত্রীর মন জয় করবে। এ জন্য জোরাজুরির প্রয়োজন নেই। স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন, উত্তম আচরণ করুন, দয়া ও ভদ্রতা দেখান, দেখবেন আপনার স্ত্রী আপনার জন্য আকুল হৃদয় হয়ে যাবে। .আমাদের মধ্যে অনেককে দেখা যায় যারা শারীরিকভাবে স্ত্রীর কাছে আছেন কিন্তু মানসিকভাবে নেই। হয়তো স্ত্রী পাশ থেকে কথা বলে চলেছেন, আর এদিকে তিনি মন দিয়ে মোবাইল টিপছেন। এটা স্ত্রীকে সময় দেওয়া নয়। স্ত্রীকে সময় দেওয়ার অর্থ তাঁর কথা মন দিয়ে শোনা, তার সাথে মনের ভাব বিনিময় করা। এই সময়টা অল্প হলেও মানসম্মত সময় দেওয়া উচিত।